নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :: দীর্ঘদিনের শর্তে পরিবর্তন এনে সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যেই হিমছড়ি ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের ইজারা বাগিয়ে নিতে কৌশল নিয়েছে বন বিভাগ। যার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্বেও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ইজারা দরপত্রে অংশ নিতে না পারায় নিজেরা যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন তেমনি সরকারও রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের হিমছড়ি ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের প্রবেশ ফি ও গাড়ি পার্কিং ফি আদায়ের ইজারাদার নিয়োগকে কেন্দ্র করে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। সিন্ডিকেটটি বন বিভাগের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হিমছড়ি ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।
সিন্ডিকেট সদস্যদের প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোন প্রতিষ্ঠান যাতে দরপত্রে অংশ নিতে না পারে সেজন্য বন বিভাগের প্রধান সহকারী ও কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে ভুল বুঝিয়ে দু’একটি শর্তে পরিবর্তন এনেছে। যার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্বেও অনেক প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিতে পারছে না। এতে দরপত্রে অংশ নিতে না পেরে প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তেমনি প্রতিযোগিতা না থাকায় সরকারও বিপুল অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা আরো জানায়, দীর্ঘ একযোগেরও বেশি সময় ধরে গিয়াসউদ্দিন, ভুলু চৌধুরী, মুফিজ, নুরুল আমিন ভুট্টো, তারেক বিন মোক্তারসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে গড়ে উঠা সিন্ডিকেটটি পালাবদল করে হিমছড়ি ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রটি ইজারা নিয়ে পরিচালনা করে আসছে। উক্ত সিন্ডিকেট সদস্যদের বাইরে অন্য কোন প্রতিষ্ঠান সেখানে ইজারা নিতে পারে না।
যেকোন কৌশলে সিন্ডিকেটের বাইরের প্রতিষ্ঠানকে বাতিল করে দেয়া হয়। এর অংশ হিসেবে সর্বশেষ গত দুই বছর ধরে একটি শর্তে পরিবর্তন আনা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ইজারা শর্তাবলীতে ‘অনুরূপ কাজের অভিজ্ঞতা সনদ’ যুক্ত করার শর্ত দেয়া থাকলেও তা পরিবর্তন করে পিকনিক স্পট, ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র, পার্ক, ন্যাশনাল পার্ক, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও সাফারী পার্ক ইজারা কাজের অভিজ্ঞতা সনদের শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। এতে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসাধু একটি সিন্ডিকেটও জড়িত।
এমন শর্ত জুড়ে দেয়ার কারণে সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যেই ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রটি জিম্মি হয়ে থাকছে বলে মনে করছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা। একইসাথে ইজারা দরপত্রে প্রতিযোগিতা না থাকায় সরকারও রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।
ভুক্তভোগী মাসুদ চৌধুরী, আবদুল হামিদ, হায়দার, জসিম উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, মমতাজ, শফিকুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, তাদের সরকারি বিভিন্ন স্পষ্ট ইজারা নিয়ে পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু হিমছড়িতে শর্ত নির্দিষ্ট করে দেয়ায় ইচ্ছে থাকা সত্বেও অনেকেই অংশ নিতে পারছে না।
যার কারণে সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যেই জিম্মি হয়ে পড়েছে ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রটি। সবাই অংশ নিতে পারলে সরকারি কোষাগারে নিশ্চিত বড় অংকের রাজস্ব জমা হতো বলে তারা মনে করেন। দ্রুত ইজারা দরপত্র বাতিল করে শর্তটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানান তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবীর এ বিষয়ে তার সম্পৃক্ততা নেই দাবী করে বলেন, বিষয়টি আমার সময়ে হয়নি। আমি যোগ দেয়ার আগেই এটি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, হিমছড়ি ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের প্রবেশ ফি ও গাড়ি পার্কিং ফি আদায়ের ইজারাদার নিয়োগের দরপত্রের সিডিউল বিক্রির শেষ তারিখ চলতি বছরের ৬ ডিসেম্বর ও দরপত্র দাখিল এবং খোলার তারিখ ৭ ডিসেম্বর। ভুক্তভোগীরা উক্ত দরপত্র বাতিল করে পূর্বের শর্ত বহাল রাখার দাবী জানিয়েছেন।
পাঠকের মতামত: